রাবি শিক্ষক তাহের হত্যা: দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর

Ad Code Here

 

ড. মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম। ছবি: সংগৃহীতড. মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম। ছবি: সংগৃহীত


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার আসামি ড. মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। আজ রাত ১০টার পর তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাহাঙ্গীর আলমের ভাই সোহরাব আলী। তিনি মোবাইলে বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়েছে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ তাকে আরও বলেছে, আজ রাতেই লাশ দাফন করার জন্য। তবে তিনি (সোহরাব আলী) বলেছেন, কাল শুক্রবার তারা লাশ দাফন করতে চান। 

তবে এসব নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য জানায়নি। তারা বলছে, জেল কোড অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগে কোনো তথ্য জানানোর নিয়ম নেই। যদিও সব প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারাগারে প্রস্তুত করা হয়েছে ফাঁসির মঞ্চও। ফাঁসি কার্যকর করতে ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৮ জন জল্লাদকে। ফাঁসির কারাগারের ভেতরে-বাইরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। 

কারাগারের একটি সূত্র জানায়, কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গণপূর্ত অধিদপ্তর অন্তত ১৫ দিন আগে আগে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুতির কাজ শুরু করে। মৃত্যুকূপটি দীর্ঘদিনের পুরেনো। তাই তারা সংস্কার করেছে। কারাগারের দক্ষিণ দিকের দেওয়ালের পাশে উন্মুক্ত ফাঁসির মঞ্চটি। এছাড়াও যে দঁড়িতে ঝুলানো হবে তাতে আসামিদের তিনগুন ওজনের বস্তু বেঁধে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ফাঁসির দঁড়িটিও চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রথমে ১৭ জন কয়েদিকে জল্লাদের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে কারা কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় ৮ জনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। 

এরা হলেন-আলমগীর, নাজমুল, সুমন, উজ্জ্বল, নাসির, মজনু, আশরাফুল ও রিয়াজুল। এদের মধ্যে প্রধান জল্লাদ আলমগীর। তিনি একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। আলমগীর এর আগেও জল্লাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। জল্লাদ দলের দুইজন নতুন সদস্য রয়েছেন। এরা হলেন-রিয়াজুল ও উজ্জ্বল। উজ্জ্বল পুঠিয়ার আলোচিত মহিমা ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাদের প্রশিক্ষণ ও ফাঁসি কার্যকরের একাধিক মহড়া দেওয়ানো হয়। 

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৮ জনের মধ্যে টিম প্রধান হাতল টেনে ফাঁসি কার্যকর করবেন। এ সময় তার সঙ্গে একজন সহযোগী থাকবেন। বাকি ৬ জনের মধ্যে ৪ জন দুই আসামিকে ধরে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাবেন। আর দুইজন তাদের কালো কাপড়ের জম টিপু ও গলায় দঁড়ি পরিয়ে দিবেন। 

সূত্রমতে, এক মঞ্চে একইসঙ্গে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হবে। আজ রাত ১০টা ১ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট তাদের দঁড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হবে। পরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে পাঠানো হবে। জাহাঙ্গীরের লাশ পাঠানো হবে মহানগরীর মতিহার থানার খোঁজাপুরে। আর মহিউদ্দিনের লাশ পাঠানো হবে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গায়। 

জানা গেছে, রাত ৯টার দিকে ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি দুই আসামিকে জানানো হবে। এরপর তাদের গোসল করিয়ে খাবারের বিষয়ে শেষ ইচ্ছা আছে কি না-জানতে চাওয়া হবে। পরে কারা মসজিদের ইমাম মাওলানা মোজাহিদুল ইসলাম তাদের তওবা পড়াবেন। এর পর ১০টার আগেই তাদের ফাঁসির মঞ্চের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। ফাঁসি কার্যকরের সময় কারাগারের ডিআইজি প্রিজন, সিনিয়র জেল সুপার ও জেলার ছাড়াও জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন, মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। কারাগারে প্রস্তুত রাখা হবে লাশ বহনের জন্য দুটি অ্যাম্বুলেন্স। 

ফাঁসির বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। তবে সিনিয়র জেল সুপার আবদুল জলিল জানিয়েছেন, কারাবিধি মোতাবেক ফাঁসি কার্যকর করা হবে। রাজশাহী গণপূর্ত অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রকৌশলী জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি কাছ থেকে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের পরই কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করতে চিঠি পাঠায়। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক প্রায় ১৫ দিন আগে মঞ্চ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়। যেহেতু ফাঁসি মঞ্চটি কম ব্যবহার হয়, তাই অনেক সময় পরিত্যক্তের মতো হয়ে পড়ে। মঞ্চের কাঠগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে। পুরো মঞ্চ কালো রং করে দেওয়া হয়েছে। গত ৫-৬ দিন আগেই কাজ শেষ করে মঞ্চ কারা কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। 

এর আগে গত ২৫ জুলাই দুই আসামির পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাত করেছেন। জাহাঙ্গীরের পরিবারের ৪০ সদস্য তার সঙ্গে দেখা করেন। আর মহিউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন স্ত্রীসহ তার পরিবারের চার সদস্য। 

জাহাঙ্গীরের ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা শেষবারের মতো আরেকবার কারাগারে দেখার সুযোগ চেয়েছিলাম। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ সে সুযোগ দেবে কি না এখনো বুঝতে পারছি না। ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ। একদিন পর ৩ ফেব্রুয়ারি বাসাটির পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক এস তাহের আহমেদের গলিত মরদেহ। ওইদিন রাতে তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলমসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। 

 ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন। 

সাজাপ্রাপ্তরা হলেন-একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম, তার ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালাম। তবে বিচারে খালাস পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও জাহাঙ্গীরের বাবা আজিমুদ্দিন মুন্সি। 

পরবর্তীতে সাজাপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল বিভাগ মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের রায় বহাল রাখলেও নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন। অন্য দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আদালত।

0 Response to "রাবি শিক্ষক তাহের হত্যা: দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর"

Post a Comment

Article Top Ads

Central Ads Article 1

Middle Ads Article 2

Article Bottom Ads